copy content আমাদের গ্রুপ এর জন্য কালেক্ট করলাম হাঁস পালন
হাঁস পালন কনটেন্টটিতে হাঁস পালন কীভাবে করা যায়, পালন করার জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে কিনা এবং সর্বোপরি এর মাধ্যমে কীভাবে বাড়তি আয় করা সম্ভব, সে বিষয় সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।
হাঁস পালন
আমাদের দেশে গ্রামীণ এলাকায় অনেক বাড়িতেই হাঁস পালন করতে দেখা যায়। হাঁসের লালন-পালন খরচ কম এবং ঝামেলা বিহীন। হাঁসের মাংস সুস্বাদু এবং ডিম আকারে বড়। হাঁসের মাংস ও ডিমের বাজার চাহিদা রয়েছে। হাঁস পালন করলে পরিবারের খাদ্য চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়। বর্তমান শহর, উপশহর এবং গ্রামেও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হাঁসের খামার গড়ে উঠেছে। বসত বাড়িতে হাঁস চাষ একটি সহজ ও লাভজনক কাজ। বাড়ির গৃহিনী এবং ছেলে-মেয়েরা অল্প মূলধন নিয়ে ছোট পরিসরে হাঁসের খামার স্থাপন ও পরিচালনা করতে পারে। পারিবারিক এই খামারে দেশি জাত ছাড়াও উন্নত জাতের হাঁস পালন করা যায়। এ অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে বাণিজ্যিক খামার প্রতিষ্ঠায় কাজে লাগে।
হাঁস পালনের উপকারিতা
1. হাঁসের ডিম ও মাংস প্রাণীজ আমিষের অন্যতম উৎস।
2. হাঁসের ডিম ও মাংস বিক্রি করে পরিবারে বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব।
3. হাঁসের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি এবং প্রতিকূল পরিবেশে মানিয়ে চলতে পারে।
4. হাঁস ও মাছের চাষ এক সাথে করা যায়।
5. হাঁস হাওর-বিল, ডোবা-নালা ও ধানের জমিতে নিজেরা চরিয়ে খেতে পারে। এর ফলে হাঁসের প্রাকৃতিক খাবারের অভাব হয় না।
6. হাঁসের বিষ্ঠা ভালোমানের জৈব সার।
বাজার সম্ভাবনা
স্থানীয় বাজার ছাড়াও বড় বড় হাটে-বাজারে হাঁস বিক্রি করা যায়। হাঁস জবাই করে পালক খসিয়ে বাজারে বিক্রি করা যায়। সম্পূর্ণ হাঁস বিক্রি করা তুলনামূলক সহজ। ডিম সরাসরি বাজারে বিক্রি করা যায়।
হাঁস পালন কৌশল
হাঁসের জাত নির্বাচন
* দেশি হাঁস
দেশি হাঁস আকারে ছোট এবং ডিমও কম দেয়। এদের মধ্যে রয়েছে নাগেশ্বরী, মাটি হাঁস, সাদা হাঁস ও রাজ হাঁস।
* উন্নত হাঁস
খাকি ক্যাম্পবেল, চেরীভেলী, জিংডিং হাঁস ও ইন্ডিয়ান রানার ডিমের জন্য ভালো। খাকি ক্যাম্পবেল ও চেরীভেলী বছরে ভালো পরিবেশে ২৫০-৩৫০টি পর্যন্ত ডিম দেয়। মাংসের জন্য পোকিন, মাস্কভি ও সাদা পিকিং ভালো। এরা বছরে ৮০-১২০টি ডিম দেয়। এদের মাংস বেশ সুস্বাদু।
হাঁস পালনের ক্ষেত্রে যে কোন একটি জাত বাছাই করতে হবে। একই খামারে নানা জাতের হাঁস রাখা ঠিক হবে না।
হাঁস পালন পদ্ধতি
সাধরণত: তিন পদ্ধতিতে হাঁস পালন করা হয়। যেমন :
1. সম্পূর্ণ মুক্ত পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে প্রায় সারাদিন হাঁসকে মাঠের মধ্যে চরানো যায়। শুধু রাতে ঘরে রাখা হয়।
2. সম্পূর্ণ আবদ্ধ পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে দিনরাত হাঁসকে ঘরের মধ্যে রাখতে হয়। ঘরের মধ্যেই পানি ও খাদ্যের ব্যবস্থা থাকে।
3. অর্ধ আবদ্ধ-অর্ধমুক্ত পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে রাতে হাঁস ঘরে রাখতে হয়। দিনের বেলা কিছু সময় ঘরে এবং কিছু সময় বাইরে রাখার ব্যবস্থা করতে হয়। পানি ও খাদ্য এমনভাবে ভাগ করে দিতে হবে যেন কিছু ঘরে এবং কিছু বাইরে চরে খেতে পারে।
ডিম ফোটানো
হাঁসীর বয়স ৬ মাস হবার আগেই ডিম দিতে পারে। একটি সাধারণ আকারের হাঁসী ১০-১৫টি ডিম নিয়ে ৩০-৩৩ দিন তাপে বসতে পারে। ফোটানোর জন্য ডিম উর্বর কিনা সেটা বাতি দিয়ে দেখতে হবে। ডিমে ১৫ দিন তাপ হলে পরীক্ষা করতে হবে। অন্ধকারে আলো জ্বালিয়ে অথবা টর্চলাইটের মাধ্যমে ডিম পরীক্ষা করতে হবে। ডিম উর্বর হলে সূতার মত পেচানো জাল দেখা যাবে। ডিম অনুর্বর হলে তার কুসুম পরিষ্কার দেখা যাবে এবং কোন ধরণের জাল বা চিহ্ন দেখা যাবে না।
হাঁসের বাচ্চা পালন
1. হাঁসের বাচ্চাকে সবসময় উমে ও শুকনো স্থানে রাখতে হবে।
2. হাঁসের বাচ্চাকে ঝুড়ি বা মাটির উপর রাখলে ১-২ সপ্তাহ ধানের তুষ বা কাটা খড় দিতে হবে। কিছুটা বড় হলে মেঝের উপর বালি এবং ছাই দিতে হবে।
3. নতুন বাচ্চাকে প্রথমে মিহি খুদি, ভাত দিতে হবে। কয়েকদিন গেলে অন্যান্য খাদ্য যেমন ছোট কোঁচো, শামুকের মাংস কাটা এবং সবজির পাতা ইত্যাদি দিতে হবে।
4. বিড়াল, কুকুর, চিকা, বেজী ও কাকের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য বেড়া বা ঝাপি, পলো দিয়ে আটকিয়ে রাখতে হবে। ৬-৮ সপ্তাহ বয়স হলে আর আটকাতে হবে না।
আধুনিক পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা পালন ও ব্যবস্থাপনা
আধুনিক পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা পালনের ক্ষেত্রে উন্নতমানের বাচ্চার জাত বাছাই করতে হবে।
ব্রুডার প্যান
1. হাঁসের ঘরকে কয়েক প্যানে ভাগ করে প্রতি প্যানে ১/২টি ব্রুডার স্থাপন করতে হবে।
2. ব্রুডারটির পরিধি প্রয়োজনে ছোট/বড় এবং উপরে/নিচে নামানো/উঠানো যায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
তাপ ব্যবস্থা
সাধারণত বাল্বের মাধ্যমে অথবা গ্যাস দিয়ে ব্রুডারে তাপ দিতে হবে।
ব্রুডারের ভিতরের তাপ ব্যবস্থা
বাইরে চরার ব্যবস্থা থাকলে ২য় সপ্তাহ পরে স্বাভাবিক প্রাকৃতিক তাপমাত্রা বজায় রাখলেই হবে।
মেঝের ধরণ ও পরিমাপ
1. মেঝে অবশ্যই পাকা হতে হবে। তাছাড়া ইট বা পাথর দিয়ে শক্ত করে সমতল রাখতে হবে।
2. বাচ্চার দৌড়াদৌড়ি ও চরার জন্য বয়সানুযায়ী যে পরিমাণ জায়গা লাগবে তা নিচে উল্লেখ করা হলো :
খাবার ও পানির ব্যবস্থা
১. খাবার ও পানির পাত্র প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি করতে হবে।
২. সুষম ও মানসমৃদ্ধ খাবার যেমন, পিলেট অথবা গুড়ো খাবার দিতে হবে। পচা, বাসি ও ছাতাধরা খাবার দেয়া যাবে না।
৩. খাবার পাত্রের মধ্যে অথবা মেঝেতে ছিটিয়ে দিতে হবে।
৪. হাঁসের বাচ্চাকে পানির পাত্রে পরিষ্কার পানি দিতে হবে।
|
0 Comments